অহন না খায় মরি গেলে কবর দিব কে?

আবু জাফর সোহেল :: ‘চুলায় আগুন জ্বলে না কয়েক দিন। রাস্তায় মানুষ নাই, কার কাছে ভিক্ষা চামু, যে কজন দেখা যায়, কাছে গেলে দূর দূর করে। আশেপাশের বাসা-বাড়িতেও ডুকতে দেয়। কি রোগ আইছে হুবাই খালি দূর দূর করে। কি করম। অহন না খায় মরি গেলে কবর দিবে কে? আঁর তো আপন কেউ নাই।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বললেন, ছিন্নমূল নারী মরিয়ম। মরিয়মের বাড়ী নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার রামপুর ইউনিয়নে। বয়সের ভারে সোজা হয়ে হাঁটতেও পারেন না। থাকেন রাজধানীর মতিঝিলের সোনালী ব্যাংক কলোনির পাশে ময়লার স্তূপের পাশে ঝুপড়ির মধ্যে। স্বজনহীন এ বৃদ্ধার বয়স প্রায় ৭০। জমির খাজনা দিতে না পারায় ভিটেবাড়িসহ সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যায়।

বিয়ের পরপরই স্বামী মারা যান। এলাকায় থাকার জায়গা পাননি। বাঁচার তাগিদে ঢাকায় চলে আসেন কবে সেই কথাও স্মৃতি থেকে মুছে গেছে । মরিয়াম বলেন, ‘হে সময় তো জোয়ান ছিলাম। এক বেডা বিয়ার কথা কইয়া ঢাকায় লইয়া আইছে। কয়দিন একলগে রাখছে তারপর হেই ব্যাংকের পিছে হালাই থুই চলি গেছে। হেতারে তো আর খুঁজি পায়নো। ২৫-৩০ বছর আগের কথা। অন তো বুড়ি হই গেছি। আর কেউ খোঁজ নেয় না। হুবাই খালী দূর দূর করে’

ছবি তুলতে চাইলে সরে যেতে চাইলো। তখন বললাম পত্রিকা থেকে আসছি। তখন হাসির দিয়ে বলে ‘মামা চিনি গো চিনি। আপনের পত্রিকাতো চিনি। আননে বুঝি হিয়ানে থাকেন।’

তিনি বলেন, ‘মামা গো আই কিততাম, হেডের জ্বালা তো সহ্য করতে হারিনা, দেহেন হেন্দার কাপরানও চিরি গেছে, অহন আই যদি না খায় মরি যায় আননেরা আরে কবর দিয়েন’ গত কয়েকদিন ধরে অঘোষিত লকডাউনে রাজাধানীর জনজীবন থমকে গেছে। এতে বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষেরা খুব বিপদে পড়েছেন। তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। সব ধরণের খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় কেউ সাহায্য করলেও সেই টাকা দিয়ে খাবারও কিনতে পারছেন না।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.