নোয়াখালীতে নিখোঁজের ৯ বছর পর তরুণীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর

সদর (নোয়াখালী) সংবাদদাতা :: নিখোঁজের ৯ বছর পর নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার এক তরুণীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে নোয়াখালীর প্রশাসক তন্ময় দাস আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে তার বাবা মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন। 

এ সময় নিখোঁজের নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যাদের আশ্রয়ে তরুণীটি বেড়ে ওঠে সেই পালক পিতা-মাতা এবং চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।জানা যায়, হাতিয়ার শূন্যের চরের সূর্যমুখী আসকা বাজার এলাকার মৎস্যজীবী মো. আবুল কাসেমের মেয়ে সেলিনা আক্কার শিরিন (১৯)। ৯ বছর আগে আবুল কাসেম সাগরে যান মাছ ধরতে। আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে শিরিন জানতে পারে ডাকাতরা তার বাবাকে মেরে ফেলেছে। আরা সেই কারণে মাও স্ট্রোক করে মারা গেছে। এরমধ্যেই  হাসপাতালে নানীর চিকিৎসা করানো অবস্থায় শিরিন হারিয়ে ফেলে তার নানীকেও। অপরিচিত এক নারী শিরিনকে নানীর কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে নিয়ে যায় চট্টগ্রামের হালিশহরে। সেখানে একটি বাসায় নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে একটি বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে বিক্রি করে চলে যান সেই নারী। 

এভাবে প্রায় ৩ বছর সেই বাড়িতে থাকাবস্থায় শরীরে নির্যাতনের বহু ক্ষত নিয়ে পালিয়ে সন্দ্বীপের অধিবাসী হালিশহরের স্বপ্না বেগমের বাসায় শিরিন আশ্রয় নেন। এরপর স্বপ্নার বড় বোন সানোয়ারা বেগম (৪৫) ও তাঁর স্বামী দিদারুল আলম শিরিনকে মানবিক কারণে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। সেই থেকে নিজের মেয়ের মতোই শিরিনকে পড়ালেখা করানো থেকে সবকিছু করেন। গত জুন মাসে মহা ধুমধাম করে শিরিনকে বিয়ে দেন তারা।

দীর্ঘ এই সময়ে তারাও চেষ্টা করেছেন শিরিনের পিতৃপরিচয় এবং তার পরিবারকে খুঁজে পেতে। ব্যর্থ হয়ে সেই আশাও ছেড়ে দেন তারা। শিরিন তাদের মেয়ে হিসেবেই জীবন-যাপন করতে থাকে। 

দীর্ঘ নয় বছর পর গত আগস্ট মাসে চট্টগ্রামের উন্নয়ণ সংগঠন ভোরের আলো’র প্রতিষ্ঠাতা উন্নয়ন কর্মী ও সাংবাদিক মো. শফিকুল ইসলাম খান হাতিয়ায় শিরিনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। তিনি জানতে পারেন শিরিনের বাবা ও মা ও অন্যান্য ভাই-বোনেরা সবাই বেঁচে আছেন। নানা আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে ও সব কাগজপত্র ও প্রমাণাদি মিলিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর বাবা-মায়ের স্নেহবঞ্চিত শিরিন আক্তার সেলিনাকে তার প্রকৃত মা-বাবার হাতে তুলে দেয়া হয়। 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.